অপরূপ
সাজে
সেজেছে
সিলেটের
জলাবন
রাতারগুল
উপরে
প্রকৃতি প্রদত্ত
সবুজ ছাতা
নিচে থৈ
থৈ জল,
আর চার
পাশে কারুকাজ
করা মন
মাতানো ডাল
পালা। এরই
মধ্যে শরীরে
শিহরণ দিয়ে
যায় শিতল
বাতাস। নেই
শহরের কোলাহলও।
কিছুক্ষনের জন্য
যেন একাকার
হয়ে
কোন এক
নতুন ভুবনে
হারিয়ে যাওয়া,
এমনই এক
জলবন সিলেটের
গোয়াইন ঘাটের
রাতারগুল।
বর্ষা
আসতে না
আসতেই সিলেটের
গোয়াইন ঘাটের
রাতার গুল
জলবন সেজেছে
অপরুপ সাজে।
আর এ
সাজনো রুপ
দেখতে সেখানে
ভীড় করতে
শুরু করেছেন
দেশের সৌন্দর্য
পিপাসুরা। তবে
যাতায়াতের সু
ব্যবস্থা না
থাকায় এবং
ফরেষ্টের ভেতর
পরিদর্শনের সুনির্দিষ্ট
পরিকল্পনার অভাবে
পর্যটকরা পড়েন
চরম দূভোর্গে।
সরকার নিজ
খরচে এ
বন রক্ষনাবেক্ষন
করে গেলেও
এই মুহুর্তে
সেখান থেকে
নেই কোন
আয়। অথচ
এটিকে একটি
পরিকল্পনায় এনে
আরও কিছু
রক্ষনাবেক্ষন করে
শুধু পর্যটকদের
কাছ থেকে
পাওয়া যাবে
কোটি কোটি
টাকার রাজস্ব।
৫০৪.৫০
একরের এই
বনে রয়েছে
বিভিন্ন প্রজাতির
গাছ পালা।
রয়েছে মুর্তা
বন, বেত
বনসহ প্রায়
অর্ধশতাধিক প্রজাতির
গুল্ম জাতীয়
উদ্ভিদ। জীবজন্তুর
মধ্যে রয়েছে
মেছো বাঘ,
বানর, বেজি,
বিষাক্ত সাপ,
বিভিন্ন জাতের
পাখি। পাখির
মধ্যে সাদা
বক, কানা
বক, মাছরাঙ্গা,
টিয়া বুলবুলি,
পানকৌড়ি, ঢুপি,
ঘুঘু, বাজ
ও চিল
পাখি। তবে
এখানে পাখির
আধিক্য থাকে
শীত কালে।
রয়েছে
বনের ভিতরের
ঝিলে ও
খালে দেশীয়
প্রজাতির মাছ।
গাছ ও
বন দেখতে
সেখানে করা
হয়েছে একটি
ওয়াচ টাওয়ারও।
নানান
রূপ:
-------------
এক এক সময় এটি একেক রূপ ধারণ করে। বর্ষার শুরুতে এর এক রূপ, মাজামাঝি এক রূপ ও ভরা বর্ষায় আরেক রূপ। আর শীত মৌসুমে এর চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন। তবে রাতারগুল দর্শনের সবচেয়ে উত্তম সময় ভরা বর্ষা। এ সময় নিচের সকল গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ পানিতে তলিয়ে যায়। আর পানিতে ভেসে থাকে গাছগুলোর ডাল পালা ও সবুজ পত্রমঞ্জুরী। এসময় অপরূপ সৌন্দর্য সমাহার ঘটে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজ আবরণে আবৃত এক দল রূপসী রমনী পানিতে ডোব দিয়ে সবে উঠছেন। আর বর্ষার শুরুত এর রূপ যেন একটি কালো খুটির উপর অনেক গুলো কালো কালো সিকের দ্বারা দন্ডায়মান অনেক গুলো সবুজ রং এর ছাতা। যে ছাতার নিচে আশ্রয়ে রয়েছে নিচের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ও নানান জীবজন্তু। আর সে ছাতার আশ্রয়ী কিছু সময়ের জন্য আপনিও হতে পারেন। এই ছাতার উচ্চতা ভরা মৌসুমে সবচেয়ে কম আর শুরুতে ও শেষে বেশি থাকে।
বনের
কাছে
গিয়ে
কোন
কোন
পথে
প্রবেশ
করবেন:
---------------------------------------------------------
এর ভেতরে
প্রবেশের জন্য
এই মুহুর্তে
তিনটি মুল
পথ রয়েছে।
এর মধ্যে
একটি মটর
ঘাট, মেইন
সড়ক অর্থাৎ
বাজারের মধ্য
খানে গ্রামের
ভিতরের রাস্তা
ও চিড়িসিংগর
সড়ক। তবে
সবচেয়ে সহজ
ও কাছের
রাস্তা হচ্ছে
মাঝের রাস্তা
। আবার
উত্তরে গোয়াইন
নদী হয়েও
প্রবেশ করা
যাবে। বনের
ভেতরে ঘুরে
বেড়ানোরও রয়েছে
বেশ কয়েকটি
পথ।
বনের
অবস্থান:
-----------------
সিলেট থেকে
প্রায় ৩৫
কিলো মিটার
দুরে গোয়াইন
ঘাট উপজেলার
ফতেপুর ইউনিয়নের
রাতার গুল
গ্রামের দক্ষিনে।
এই বনের
উত্তরে গোয়াইন
নদী, দক্ষিনে
রাতার গুল
গ্রাম, পূর্বে
কাপনা নদী
ও পশ্চিমে
মটর ঘাট।
আর পুরো
জলবন তিন
অংশে বিভক্ত।
এর মধ্যে
রাতার গুল
৩২১.৬৯
একর জমি
নিয়ে, বগা
বাড়ি ৩৭.৫০
একর ও
মহেশ খের
১৩১ একর
জমি জুড়ে।
এর মধ্যে
মহেশ খেরের
প্রায় সবকটি
জমিই এক
শ্রেণীর ভুমি
খেঁকুরা জোর
করে দখল
করে রেখেছে।
যেখানে তারা
এখন ধান
চাষ করছে।
যার চার
পাশ প্রায়
১০ কিলোমিটার
ব্যাপী হবে।
এর ভেতরে
রয়েছে কয়েকটি
ডোবা বা
ঝিল এবং
কৈয়া খাল।
তবে এর
ভেতরে প্রবেশের
আগে দু
পাশ থেকে
দুটি বিল
অতিক্রম করতে
হয়। একটি
শিমুল বিল
অপরটি নেওয়া
বিল।
বনের
আয়:
------------
বর্তমানে এই
বন থেকে
সরকারের কোন
রাজস্ব নেই।
সরকার ভুতুর্কি
দিয়ে এই
বনের পাশে
একটি বিট
অফিস নির্মান
করে কার্যক্রম
চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে একজন
বিট কর্মকর্তা
ও একজন
ফরেষ্ট গার্ড
কর্মরত রয়েছেন।
এই বনে
রয়েছে বেত
ও মুর্তা।
রয়েছে ভিতরের
খালে ও
ঝিলে বিভিন্ন
প্রজাতির মাছ।
যা শুষ্ক
মৌসুমে বিক্রি
করে রাজস্ব
পাওয়া যেতে
পারে। আর
ইকো ট্যুরিজমের
আওতায় আনা
গেলে এখান
থেকে বছরে
কোটি কোটি
টাকার রাজস্ব
আসবে।
কি
করতে
হবে
বলে
পর্যটকরা
মনে
করেন:
------------------------------------------------------
গ্রামবাসী ও
পর্যটকদের সাথে
আলাপ করে
এই বনের
জন্য যে
সকল কাজ
করা প্রয়োজন
বলে তারা
মনে করেন
তা হলো
বনের ভিতরে
নির্দিষ্ট একটি
স্থান পর্যটকদের
জন্য উন্মুক্ত
করা, এর
ভিতরে ইঞ্জিনের
নৌকা চলতে
না দেয়া।
তিনটি রাস্তায়
বনে প্রবেশের
পরিবর্তে একটি
রাস্তায় প্রবেশ।
আর পর্যটকদের
জন্য ভেতরে
নৌকা ভ্রমনের
নির্দিষ্ট ভাড়া
নিধারন করে
রাখা। অন্যদিকে
বনের ভিতরে
নিবন্ধিত মাঝি
প্রদান করা
প্রয়োজন। এই
মুহুর্তে তিনটি
ঘাটে প্রায়
১৫০ জন
মাঝি পর্যটকদের
বহন করে
জীবিকা নির্বাহ
করছেন।
বন
বিভাগ
কি
বলে:
------------------------
এই বনের
হিজল, করছ,
বরুন, কদম,
বট, ছাতিম,
অর্জুন ও
পানি জামসহ
বিভিন্ন প্রজাতির
গাছপালা, মুর্তা,
বেত, পশুপাখি,
জীবজন্তুর এ
বন সংরক্ষন
করার প্রয়োজনীতার
কথা জানালেন
খোদ রাতারগুল
বন বিট
কর্মকর্তা দিলীপ
মজুমদার। তিনি
জানান, এ
বন থেকে
বর্তমানে সরকাররের
কোন রাজস্ব
নেই। তদুপুরী
বন বিভাগ
এর রক্ষনা-বেক্ষনের
জন্য তিনিসহ
আরও একজন
ফরেষ্ট গার্ড
নিয়োজিত করেছেন।
তবে সেখানে
বিদ্যুত এবং
যোগাযোগের বাহন
না থাকায়
কষ্ট করে
তাকে দ্বায়িত্ব
পালন করতে
হয়।
তবে
এ বনটি
সংরক্ষণ শীঘ্রই
ব্যবস্থা নেয়া
হবে বলে
জানালেন সিলেট
বিভাগীয় বন
কর্মকর্তা মো.
মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান,
২০১৫ সালে
এই বনটিকে
সংরক্ষিত ঘোষনা
করা হয়েছে
এবং এই
বনকে পর্যটকের
জন্য উন্মুক্ত
করতে নেয়া
হচ্ছে বিভিন্ন
ব্যবস্থা। একই
সাথে এর
ভেতরের উন্নয়ন
সাধনের পাশাপাশি
করা হবে
কো-মেনেজমেন্ট
কমিটি। একটি
রাস্তাকে এষ্টাব্লিষ্ট
করা হবে।
পর্যটকের
অভিমত:
---------------------
এর রূপ
দেখে কোন
কোন পর্যটক
এটিকে বাংলার
স্বর্গ বলে
অভিহিত করেন।
সম্প্রতি এই
বন পরিদর্শনে
গেলে সেখানে
কথা হয়
দর্শনার্থী মাষ্টার
গোলাম মোস্তফা
রাজা ও
বেগম নুরজাহান
রানী রাজার
সাথে। তারা
জানালেন এখানে
এসে কিছুক্ষনের
জন্য হারিয়ে
গেছেন নতুন
কোন ভুবনে।
এ যেন
এক ভুস্বর্গ।
একই কথা
জানালেন ভ্রমন
পিপাসু আশিষ
রঞ্জন দে
ও শিখা
দে। তারা
জানান, আমাদের
দেশের এতো
সুন্দর দর্শনীয়
স্থান রেখে
কেন আমরা
দেশের বাহিরে
গিয়ে টাকা
নষ্ট করি।
আর আরেক
পর্যটক অধ্যাপক
রজত শুভ্র
চক্রবর্তী জানালেন
এখানে এসে
যেন প্রকৃতির
সাথে মিশে
গেছেন তিনি।
প্রকৃতি এবং
তিনি দুই-এ
মিলে এক
হয়ে গেছেন।
দেখা হয়
ফটো সাংবাদিক
বিক্রমজিৎ বর্ধনের
সাথে। তিনি
জানান, একজন
সৌখিন ফটোগ্রাফারের
উত্তম খাবার
ফটো তুলার
স্থান হচ্ছে
এই জলবন।
তবে তারা
এর যাতায়াতের
রাস্তা মেরামত
ও ঘুরে
দেখার জলপথ
সংরক্ষনেরও জোড়
দাবী করেন।
কিভাবে
যাওয়া
যাবে:
--------------------------
এই বনে
সিলেট থেকে
দুটি পথে
যাওয়া যায়।
একটি এয়ারপোট
সড়ক হয়ে
। অপরটি
জাফলং সড়ক
হয়ে। তবে
আনুপাতিক হারে
জাফলং সড়কটি
কিছুটা ভালো।
এ পথে
যেতে হলে
জাফলং এর
মধ্যবর্তী হরিপুরের
আগে হাতের
বা দিকে
ফতেপুরের রাস্তায়
যেতে হবে।
ফতেপুরের রাস্তায়
গিয়ে শেষের
অংশ কাচা।
সিলেট থেকে
এর দুরত্ব
প্রায় ২৭
কিলোমিটার আর
উপজেলা সদর
গোয়াইন ঘাট
থেকে ৯
কিলো মিটার।
অন্যদিকে এয়ারপোর্ট
রোডের রাস্তা
কিছুটা কম
হলেও সে
রাস্তা অনেকটা
ভাঙ্গাচুড়া।
পর্যটকদের
যে
বিষয়ে
শর্তক
থাকতে
হবে :
----------------------------------------
সেখানে যাওয়ার
পথে সিলেটের
পরে খুব
ভালো খাবার
হোটেল নেই।
বনের ভিতরে
প্রবেশ করলে
যে কোন
সময় বৃষ্টি
আসলে আশ্রয়ের
জায়গা এক
পাশে বন
অফিস ও
পর্যটক টাওয়ার।
বনে রয়েছে
বেশ কিছু
বিষাক্ত সাপ।
তাই বনের
গাছে উঠা
বা এর
গা ঘেসে
না চলাই
ভালো। রয়েছে
অসংখ্য পানি
জোক ও
ঘাসে থাকা
চিনা জোক। একা
গভীর বনে
প্রবেশ না
করাই ভালো।
ভাড়ার ক্ষেত্রে
পর্যটকদের শর্তক
থাকতে হবে।
এখানের মাঝিরা
খুব ভালো।
তবে দুএকজন
আছেন চার
পাচ শত
টাকার ভাড়ার
স্থলে তিন
থেকে ৪
হাজার টাকা
দাবী করে
বসেন। বনের
ভিতরে কয়েকটি
ঝিল আকৃতির
জলাধার রয়েছে।
বর্ষায় সে
জায়গা অনেক
গভীর। তাই
এই জায়গা
অতিক্রমের সময়
সাবধানতা অবলম্বন
করা উচিত।
আর নৌকায়
অতিরিক্ত লোক
না উঠাই
ভালো।
যত
দ্রুত সম্ভব
এই বনের
পরিবেশ রক্ষা
এর ভিতর
দিয়ে ইঞ্জিন
চালিত নৌকা
যাতায়াত বন্ধ
করা ও
জীবজন্তুদের অবাধ
বিচরণে পর্যটকদের
জন্য নির্দিষ্ট
পথ ব্যবহারের
ব্যবস্থাসহ এই
বন সংরক্ষণে
এগিয়ে আসবে
সংশ্লিষ্ট বিভাগ
এমনটাই চান
পর্যটক ও
বননির্ভর অধিবাসীরা।
N.M Shariful Islam
University of Dhaka
01711-000555